প্রকাশঃ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০৩:৪৪:৪৫
| আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:১৩:০৭
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পাহাড়ে টার্কি পাখি পালন করে তাক লাগিয়েছেন রাঙামাটির নানিয়াচরের পায়েল চাকমা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করা এ তরুণ নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। পিয়ালের সফলতায় পাহাড়ে টার্কি খামারের ব্যপক সম্ভাবনা দেখছে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ।
সম্প্রতি নানিয়াচরে টিএন্ডটিতে পায়েলের খামারে গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের ছোট্ট দ্বীপে তাদের বাড়ি। চারদিকে কাপ্তাই হ্রদ। দুপুর বেলা তখন। পুরো দ্বীপে বিচরণ করছিল টার্কি পাখিগুলো। কিছু পাখি গাছের ছায়ায়, কিছু পাখি রোদে বিশ্রাম নিচ্ছিল। কিছু ঝোপঝাড়ে লতাপাতা খাচ্ছিল আর কিছু খামারে। শত টার্কি পাখির কিচিরমিচির ডাক কানে আসছিল চারদিক থেকে।
কথা হয় উদ্যোক্তা পায়েল চাকমার সাথে। তিনি বলেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে সে ঢাকায় পাড়ি জমায় ২০০৪ সালে। ২০১১ সালে পড়াশোনা (বিএসসি ডিপ্লোমা) শেষ করে বন্ধুর সাথে বেড়াতে যান গাজীপুরে। গাজীপুরের সেই বন্ধুর বাড়িতে ছিল টার্কি পাখি। তাঁর কাছ থেকে তিনটি টার্কি পাখির বাচ্ছা নিয়ে আসনে নানিয়াচরে। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁর।
সেই টার্কি থেকে আজ সাড়ে ৪শ অধিক টার্কি এখন পায়েলের খামারে। পাশাপাশি পালন করছেন তিথি পাখিও। পিয়াল বলেন বর্তমানে খামারের পাখিগুলোর মূল্য ১৫ লাখ টাকার উপরে হবে।
পিয়ালের মা বাবা দুজনই সরকারী চাকুরী করেন। তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে চাকুরী করবে। কিন্তু তাদের ছেলে পড়াশুনা শেষ করে হয়েছে খামারী। মা-বাবা দুজনই ছেলেকে সহায়তা করছেন। ছেলের এ সাফল্য দেখে খুশি তারা।
পায়েলের মা ধনীতা চাকমা (৫৪) বলেন, ছেলে আর চাকুরীর চিন্তা করে না। সে এখন পুরোদমে খামারী হয়েছে। টার্কি পাখিদের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে আমাদের সবার। তার খামারের পাখি দেখে আমাদের আনন্দ হয়। শখের কারণে আমরা সবাই তার খামার দেখাশুনা করি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে চাকুরী করা পিয়ালের বাবা জ্যোতি কান্তি চাকমা (৫৫) বলেন, ছেলে আর চাকুরী করতে রাজী নয়। টার্কি ফার্মের দিকে সে বেশী মনযোগী।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা.মনোরঞ্জন ধর বলেন, টার্কি পাখির রোগ বালাই কম। তাছাড়া টার্কি পাখির খাবারের তালিকায় ৬০ ভাগের অধিক খাবার লতাপাতা। বাকী অংশ দানাদার খাবার। টার্কি পাখির মাংস সুস্বাদু ও শরীরের জন্য উপকারী। এ মাংসে কোলেস্টেরেল নেই।
মনোরঞ্জন ধর বলেন, পায়েলের খামার ছাড়া রাঙামাটি এখনও কোন টাকির্র খামার নেই। পাহাড়ে টার্কি খামার বেকারত্ব দুর করতে ভুমিকা রাখবে বলেন মনোরঞ্জন ধর।
পায়েল চাকমা বলেন, চাকুরি করার চিন্তা করি না। কারণ অর্থনৈতিক মুক্তি আসলে চাকুরির প্রশ্ন আসে না। ভালো জায়গা পেলে এ খামার আরো সম্প্রসারণ করব। তার খামারের টার্কি এক মাস বয়সী জোড়া তেরশ টাকা, দুই মাস বয়সী জোড়া দুই হাজার, পূর্ণ বয়স্ক জোড়া ৪ হাজার এবং আকারে বড়গুলো কেজি চারশ টাকা করে বিক্রি করছেন। যে কেউ তার খামার থেকে টার্কি পাখি সংগ্রহ করতে পারবে জানিয়ে রেখেছেন পায়েল।
পিয়াল বলেন, পাহাড়ে অনেক অনাবাদি জমি আছে। যে কেউ চাইলে টার্কি খামার করে বেকারত্ব দুর করতে পারবে। পাহাড়ের বেকার তরুণ সমাজ আমার মত খামার করতে পারে। এ খামার করা কঠিন কোন কাজ নয়।
জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ধর বলেছেন পাহাড়ে দারিদ্র মুক্ত করতে ভুমিকা রাখবে এ টার্কি খামার।