চীবর উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে রাজবন বিহারে শেষ হলো ২দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব

প্রকাশঃ ০৫ নভেম্বর, ২০২২ ০৪:১৪:০৪ | আপডেটঃ ১২ জানুয়ারী, ২০২৫ ১০:১৭:০৯
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। করোনার কারনে ২ বছর বন্ধ থাকার পর আজ আবার চীবর উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে রাঙামাটি রাজবন বিহারে শেষ হলো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান উৎসব।  বৃহস্পতিবার বিকালে বেইন ঘরে সুতা কাটার মাধ্যমে চীবর বানানোর কাজ শুরু হয়।  শুক্রবার বিকালে চীবর প্রদানের মাধ্যমে এর উৎসবে পরিসমাপ্তি ঘটে। কঠিন চীবর দান উৎসবে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা যোগ দেয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে বেইন ঘরে সুতা কাটার মাধ্যমে চীবর বানানোর কাজ শুরু হয়।  বিকাল ৩টায় চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় এবং রাণী ইয়েন ইয়েন বেইন ঘরে সুতা কাটার মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই বিশাখা প্রবর্তিত এ ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদিবাসী নারীরা চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর প্রস্তুত করে তা দান করা  হয়। এজন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। অপরদিকে তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ লোকজনের সমাগম ঘটেছে। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে বন বিহারের আশেপাশে রকমারী জিনিসপত্রের দোকান, খাবার দোকান বসানো হয়েছে। অনুষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরি করে আজ বিকালে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় চীবর বনভান্তের প্রতিকৃতিতে অর্পন করেন। এর পর একে একে সবাই চীবর দান করেন। কঠিন চীবর দান উৎসবে ধর্মীয় দেশনা দেন বনভান্তের প্রধান শিষ্য  প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।

অনুষ্ঠানে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি, চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রæ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মিণী য়েন য়েনসহ আরো অনেকেই। চীবর দান উৎসবে রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও খাগড়াছড়ি-বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ছুটে এসেছেন। এছাড়া ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা যোগ দেন। এসময় সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজবন বিহার। চীবর দানকে কেন্দ্র করে পুরো বিহার এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম হয়।

চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন,  আমাদের প্রার্থনা থাকবে  পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক, বাংলাদেশের যে উন্নয়নের যাত্রা সেটি যথাযথ হোক এবং সারা বিশ্ব থেকে করোনা বা মহামারি চলে যাক।

এবারের বেইন ঘরের ১৯৯টি কোমড় তাঁতের চরকা চরকীতে ২শ  জন পাহাড়ী ধর্ম প্রাণ নারী ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকায় তূলা থেকে সূতা বের করে কাপড় বুনন, রংকরণ ও সেলাই করে চীবর (কাপড়) প্রস্তুত করেন। আজ বিকালে এসব চীবর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে দান করা হয়।