সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। শাহ আব্দুল করিমের বিখ্যাত 'আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম' গানে হিন্দু ও মুসলমানের সম্প্রীতির যে বহিঃপ্রকাশ তারই প্রতিচ্ছবি যেন পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ি। জেলার দীঘিনালা উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের অ্যাপায়ন ও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শুধু এ বছর নয়, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সম্প্রীতির এমন অনন্য নজির স্থাপন করেছে দীঘিনালার বোয়ালখালীর আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া নামে প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে দীঘিনালার বোয়ালখালী এলাকার নারায়ণ মন্দির পূজা মন্ডপে গিয়ে দেখা যায়, অষ্টমীর পূজা শেষে পূর্ণার্থীরা দেবী দূর্গা সহ অন্যান্য প্রতিমা দর্শন ও প্রার্থনা করছেন। একপাশে ঢাক, ঢোল ও বাশিঁ বাজাচ্ছেন বাদক দল। অন্য দশটি পূজা মন্ডপের মতো উৎসব মুখর পরিবেশ। হঠাৎ করে থেমে গেলো ঢাল, ঢোল ও বাশিঁর আওয়াজ। মন্ডপের পূর্ব পাশ থেকে কানে ভেসে এলো যোহরের আযানের সুর। আযান শেষে আরও ৩০-৪০ মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল মন্ডপের সমস্ত মাইক ও ঢাক ঢোলের আওয়াজ। মন্ডপ থেকে বের হতে চোখে পড়ল আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়ার সাইনবোর্ড। মন্ডপ ও মাদ্রাসার দূরত্ব একশ গজেরও কম। মাদ্রাসার ভেতরে মসজিদ। পাশাপাশি মসজিদ, মাদ্রাসা ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীর মন্দিরে পূজার মন্ডপ হলেও কারো ধর্ম পালনে কোন সমস্যা নেই বলছেন স্থানীয়রা।
বোয়ালখালী এলাকার করিম মিয়া বলেন, ২ যুগ ধরে মাদ্রাসা হয়েছে এই গ্রামে। মন্দির আরও আগে থেকে। মসজিদে নামাজের সময় মন্দিরের মাইক ও অন্যান্য শব্দ বন্ধ থাকে। পাহাড়ী, বাঙ্গালী, হিন্দু ও মুসলিম সবাই মিলে এক সাথে বসবাস। কারও ধর্ম পালনে কেউ কোন সমস্যা করে না।
দীঘিনালার বোয়ালখালী নারায়ণ মন্দিরের সভাপতি মৃদুল কান্তি সেন বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর মন্দিরে দূর্গা পূজা ও রাস উৎসবের সময় দায়িত্ব পালন করতে আসা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের প্রতিদিন দুই বেলা করে অ্যাপায়ন করছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এমনকি সন্ধ্যার সময় যখন মন্ডপ ও আশপাশের গ্রামীণ মেলায় লোকারণ্য হয় তখন শৃঙ্খলা ধরে রাখতে মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্য গ্রামবাসীরা মিলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে। আমাদের মাঝে কোন ধরণের ভেদাভেদ নেই।
দীঘিনালার বোয়ালখালী আল
মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়ার প্রধান
পরিচালক মাওলানা আব্দুল্লাহ মেহেরী
বলেন,
মসজিদে
যখন
আযান
হয়
তখন
মন্দিরের কোন
মাইক
বা
পূজার
সময়
ঢাক
ঢোল
বন্ধ
থাকে।
পরস্পরের প্রতি
আমাদের
আচরণ
প্রতিবেশীর মতো।
আমরা
যেমন
তাদের
কাজে
যায়,
তারাও
আমাদের
বিভিন্ন কাজে
আসেন।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাশেম বলেন, শুধুমাত্র বোয়ালখালী নয়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাশাপাশি মসজিদ ও মন্দিরে যে যার ধর্ম পালন করছেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সম্প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিবাচক শিক্ষা হবে বলছেন তিনি।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করায় ২০২১ সালে দূর্গা পূজা শেষে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া ও নারায়ণ মন্দির পরিচালনা কমিটিকে সম্মাননা প্রদান করেন।