প্রকাশঃ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৫:৩৬:১৪
| আপডেটঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৩১:৫৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি সদরের পেরাছড়া ইউনিয়নের সাতভাইয়াপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে জন্ম বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনীর। শহর থেকে অদূরের গ্রাম হলেও সাতভাইয়াপাড়া সড়ক যোগাযোগ ও পিছিঁয়ে পড়া একটি গ্রাম। বিগত কয়েক বছর ধরে আনাই আনুচিংয়ের গ্রাম হিসেবে সাতভাইয়াপাড়াকে চিনতে শুরু করেছেন জেলার মানুষ।
বর্তমানে সবাই আনুচিং ও আনাইকে নিয়ে এত আলোচনা করলেও শুরুর গল্পটা ছিল তাদের বাড়ির পথের মতো দুর্গম। সোমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দলের অন্যতম দুই খেলোয়াড আনাই ও আনুচিং নেপালে অবস্থান করলেও তাদের বাড়িতে ও আশপাশে চলছে আনন্দের জোয়ার। গ্রামবাসী অপেক্ষা করে আছে তাদের বরণে।
মঙ্গলবার দেয়া এক সাক্ষাতকারে আনাই-আনুচিংয়ের বাবা রাপ্রæ মগ বলেন, শুরুর গল্পটা খুব কঠিন ছিল। অভাব অনটনের সংসারে মেয়েদের ঠিকমত খাবার ও পড়ালেখার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হতো। ছোট বেলা থেকে দুই বোনের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। বাড়ির উঠানে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলত। দেখে অনেক সময় বকা দিতাম। একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্ণামেন্টের প্রতিযোগীতা চালু হয়। সেখানে তাদের খেলতে নিয়ে যান বিদ্যালয়ের শিক্ষক। টুর্নামেন্ট শেষে তাদের আগ্রহ দেখে রাঙামাটির ঘাগড়া নেয়া যান আরেক ক্রীড়া শিক্ষক। তার তত্ত¡াবধানে সেখানে ফুটবল খেলার নানা নিয়ম রপ্ত করেন। এখন আমার মেয়েরা দেশের জন্য খেলছে, এটার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়। কারণ, উনি যদি মেয়েদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা না করতেন তাহলে আজ এ সুযোগ পেতাম না।
২০১৮ সালের নেপালের মাটিতে প্রথম জয় ছিনিয়ে এনে দেশবাসীর কাছে পরিচিত লাভ করে খাগড়াছড়ির মেয়ে আনাই, আনুচিং ও মনিকার। তাদের ফুটবল খেলার নিপূর্ণতায় মুগ্ধ হয়েছিল পুরো দেশ। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে সে সময় তিন খেলোয়াডের পাশে দাঁড়ান। প্রতিশ্রæতি অনুসারে ঘর ছাড়া বাকী সব কিছু কেবলই প্রতিশ্রæতি রয়ে গেছে। এ নিয়ে আক্ষেপ করে আনাই আনুচিংয়ের মা আপ্রæমা মগীনি বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বাড়ির পাশের ছড়ার উপর একটি কালভার্ট করে দেয়ার প্রতিশ্রæতি ছিল। চার বছরেও এটি হয়নি। মেয়েদের খেলাধুলা করে আয়ে এখন সংসার চলে। অনেক প্রতিশ্রæতি আছে তা বাস্তবায়ন হলে আমাদের জীবন আরও পাল্টে যাবে।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দূর্গম উপজেলা ল²ীছড়ির সুমন্তপাড়ার মেয়ে মনিকা চাকমা। ভৌগলিক দূর্গমতাকে পিঁছি ফেলে মনিকাও রচনা করেছেন নিজের গল্প। আনাই আনুচিংদের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল টুর্ণামেন্ট থেকে উঠে এসে বিশ্ববাসীর কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন। অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে মনিকা পরিবারের পক্ষ থেকে উৎসাহ পেয়ে রাঙ্গামাটির ঘাগড়া ফুটবল একাডেমী থেকে নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্ব দরবারে।
মনিকা চাকমার গ্রামের বাড়ি সুমন্ত পাড়ার বাড়িতে গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের দেখা পাওয়া না গেলেও স্থানীয়দের মাঝে তাকে নিয়ে বেশ উল্লাস চলছে। বিদ্যুৎ ও ভালো ইন্টারনেট ব্যবস্থা না থাকায় রাতে খেলা দেখতে না পেলেও দিনের বেলায় অনেকে মোবাইল ফোনে খেলা দেখেছেন। নিজেদের গ্রামের মেয়ের এমন সফলতায় আনন্দ আত্মহারা পুরো উপজেলাবাসী। খুশিতে মিষ্টি বিতরণও চলে।
খাগড়াছড়ির তিন খেলোয়াড় ও জাতীয় দলের সহকারী কোচ তৃষ্ণা চাকমাকে তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকার অর্থ উপহার ঘোষণা দিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।