প্রকাশঃ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৫:১৫:১৮
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:০৬:১৭
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। বান্দরবান লামা সরই ইউনিয়নের লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের করাল থাবা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের শেষ অবলম্বন ৪০০ একর জমি রক্ষার দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। আজ সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘জহুর হোসেন’ হল রুমেএই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ করে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগ দখলীয় ৪০০ একর জুম ভূমিসহ কোম্পানি কর্তৃক বেদখলকৃত সকল জমি ফেরত দেয়া; কোম্পানির কর্মকান্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ; জুম ভূমি কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা, অশোক বৌদ্ধ বিহারে হামলা ভাংচুর ও বুদ্ধ মূর্তি লুট এবং ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরার উপর হামলার সাথে জড়িত কামাল উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন, জহির উদ্দিন গং দের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা; কোম্পানি কর্তৃক ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ১১ জনের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বান্দরবানে রাবার ও অন্যান্য বাগান সৃজন কিংবা পর্যটন উন্নয়নের উদ্দেশ্যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া সকল জমির লিজ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনেলিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা। এসময় লামা সরই ভূমি রক্ষা কমিটি’র সদস্য সচিব লাংকম ম্রো, যুগ্ম আহবায়ক রেংয়েন ম্রো, যুগ্ম আহবায়ক ফদরাম ত্রিপুরা, যুগ্ম আহবায়ক সংলে ম্রো, সদস্য মথি ত্রিপুরা, সদস্য রুইপাও ম্রো উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন, ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ভূমি রক্ষা কমিটি’র আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাধীন সরই ইউনিয়নের ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজায় আমাদের ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৪০০ একর জুম ভূমি রয়েছে, যা আমরা বংশপরম্পরায় তিন গ্রামবাসী লাংকম পাড়া (ম্রো কারবারি), জয় চন্দ্র পাড়া (ত্রিপুরা) ও রেংইয়েন পাড়ার (ম্রো) ৩৯ পরিবার ভোগদখল করে আসছি। গত ৯ এপ্রিল ২০২২ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম গং ২০০ জনের অধিক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভাড়া করে ভূমিজ সন্তান লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র পাড়া ও রেংয়েন পাড়াবাসীদের উক্ত জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায় এবং আমাদের লাগানো ফলদ চারা যেমন আনারস, বরই, আম, জাম, কাঠাল গাছ ও বাঁশ বাগানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাফ করে দেয়। এরপর ২৬ শে এপ্রিল তারা ওই জমির বাগানে আগুন দিয়ে প্রাকৃতির পরিবেশসহ লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করেছে।
তিনি আরো বলেন, লামার বিস্তীর্ণ এলাকার জমি একসময় সম্পূর্ণ ম্রো ও ত্রিপুরাদের সমষ্টিগত মালিকানার অধীনে ছিল। সে সময় সেখানে পাহাড়িরা জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। তখন সেখানে কোন কোম্পানী ও ব্যক্তির নামে কোন প্রতিষ্ঠান বা বহিরাগতের জমি ছিল না। কিন্তু জেলা প্রশাসন পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনকে তোয়াক্কা না করে গত শতকের ৮০-৯০ দশকে বেআইনীভাবে বহিরাগতদের নামে-বেনামে জমি লিজ দেওয়ার কারণে উক্ত জুম ভূমি থেকে ম্রো ও ত্রিপুরা স¤প্রদায়ের লোকজন উচ্ছেদ হতে থাকে। প্রশাসনের সহায়তায় মন্নান বাগান, মকবুল উকিল বাগান, ক্লিফটন এগ্রো, মেরিডিয়ান এগ্রো, গাজী গ্রæপ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিজামপুর এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড, হামেলা হোসেন ফাউন্ডেশন, পাহাড়িকা প্লানটেশনসহ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নামে ভূমি দস্যুরা জমি লিজ নেয়। এর ফলে সেসব জমি থেকে পাহাড়িরা উচ্ছেদ হয়ে যায়। রাবার বাগান সৃজনের কারণে ১৯৮৮ সালে ফাইয়ং পাড়া এবং ঙুইন পাড়া ধ্বংস হয়। উক্ত দুই পাড়ায় ৮০ পরিবারের অধিক পাহাড়ির বসবাস ছিল। অনুসন্ধানী তথ্য মতে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ডলুছড়ি মৌজায় ১৯৮৮-৮৯ সালে ১৬ জন শেয়ার হোল্ডারে নামে জনপ্রতি ২৫ একর করে মোট ৪০০ একর এবং ১৯৯৩-৯৪ সালে একই মৌজায় ২৮ জনের নামে জনপ্রতি ২৫ একর করে মোট ৭০০ একর ও ১৯৯৪-৯৫ সালে ৪ জনের নামে ২৫ একর করে ১০০ একর জুম ভূমি বরাদ্দ নেয়। অথার্ৎ ডলুছড়ি মৌজায় মোট ৪৮ জনের নামে ১২০০ একর জমি লিজ নিয়েছিল।অপরদিকে একই ইউনিয়নের সরই মৌজায় ১৬ জন শেয়ার হোল্ডার ২৫ একর করে মোট ৪০০ একর ভূমি লিজ নেয়। অর্থাৎ লামা রাবার ইন্ড্রাষ্টিজ লিমিটেড ৪০ বছরের জন্য ৬৪ জনের নামে দুই মৌজায় (১৯৮৮-১৯৯৪) সর্বমোট ১৬০০ একর জমি লিজ নেয়। তবে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর নামে দলিলে লিজ নেওয়া জমির পরিমাণ ১৬০০ একর হলেও বাস্তবে তার পরিমাণ ৩০০০-৩৫০০ একরেরও বেশী। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এত বিশাল পরিমাণ জমি নানান কায়দায় বেদখল করেও ক্ষান্ত হয়নি এবং তার জমির ক্ষুধা মেটেনি, এখন কোম্পানিটির লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে পূর্ব দিকে অবস্থিত লাংকম পাড়া, জয়চন্দ্র পাড়া এবং দক্ষিণে রেংয়েন পাড়ার জমি। এই জমিতেও তারা রাবার বাগান সৃজন করতে চাইছে।লিজ চুক্তিতে ইজারা গ্রহীতাদের ২৮ টি শর্ত দেওয়া হলেও কোনটিই তারা মেনে চলেনি।
ভূমিদস্যু কামাল উদ্দিন গং ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা, সদস্য সচিব লাংকম ম্রো, যুগ্ম আহবায়ক রেংয়েন ম্রো, যুগ্ম আহবায়ক ফদরাম ত্রিপুরা, সদস্য মথি ত্রিপুরাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা আমাদের জমি রক্ষার জন্য বার বার প্রশাসনের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে কোন রুপ সহযোগিতা পাইনি। বরং প্রশাসন ন্যাক্কারজনক ভাবে ভূমি দস্যুদের পক্ষাবলম্বন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহŸায়ক রংধজন ত্রিপুরা।