প্রকাশঃ ২৬ অগাস্ট, ২০২২ ০৫:১২:৪৯
| আপডেটঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৩২:১৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। সুভায়ন খীসা। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। গত ১৬ আগস্ট নিজ কার্যালয়ে একই উপজেলার মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৌসুমি ত্রিপুরাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টায় অভিযুক্ত হয়ে মামলার আসামী। ঘটনার দিন মৌসুমি ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলার এজাহার দেয়ার পরের দিন অর্থাৎ ১৭ আগস্ট থেকে তিন দফায় ছুটির আবেদন করেন সুভায়ন খীসা এবং তা মঞ্জুর করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ছুটি মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, নৈমিত্তিক ছুটিতে দুই বার এবং চিকিৎসার জন্য ২৪ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনের ছুটিতে রয়েছেন সুভায়ন খীসা। ঘটনার পর থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে চাওয়া ছুটি মঞ্জুরি হওয়ায় সুভায়ন খীসা দাপ্তরিক ভাবে ছুটিতে থাকলেও পুলিশের নথিতে মামলা দায়ের পর থেকে রয়েছেন পলাতক।
ভিকটিম মৌসুমি ত্রিপুরা বলেন, গত ১৬ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার দিন রাতে সুভায়ন খীসা সহ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের কয়েকজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকর্মী তাকে হাসপাতালে দেখতে যান এবং মীমাংসার প্রস্তাব দেন। মীমাংসায় অস্বীকৃতি জানানোর পর সুভায়ন খীসা হাসপাতলে তাকে আবারও প্রাণনাশের হুমকি দেন। ঘটনার পর থেকে শিক্ষা অফিসের কর্মকাণ্ডে ন্যায় বিচার পাওয়ায় শঙ্কা জানিয়ে বলেন, গত ২৩ আগস্ট আমাকে অনেকটা জোরপূর্বক এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি সাক্ষাতের জন্য ডেকে পাঠান। আমি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে তদন্ত কমিটির সাথে সাক্ষাত করি এবং বক্তব্য উপস্থাপন করি। কিন্তু সুভায়ন খীসাকে কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ বা সাক্ষাতকার নেয়া ছাড়া কয়েক দফায় ছুটি মঞ্জুর করেছেন। একজন নারী শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার পরও কি ভাবে তাকে এতো সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন। শুনতেছি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুভায়ন খীসা উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিনের চেষ্টা করছেন।
ছুটি মঞ্জুরের ব্যাপারে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সুভায়ন খীসার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। ২৪ আগস্ট ই-মেইল যোগে চিকিৎসার জন্য আরও ১৫ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করলে তাও মঞ্জুর করে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি দেয়া হয়েছে। নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন কিভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কনিকা খীসার মাধ্যমে সুভায়ন খীসা ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন। সুভায়ন খীসার কাছ থেকে তিনি কিভাবে আবেদন গ্রহণ করেছেন সেটি কনিকা খীসায় ভালো বলতে পারেন।
এ বিষয়ে কনিকা খীসা বলেন, সহকর্মী সুভায়ন খীসার স্ত্রী তার কাছে ছুটির আবেদন নিয়ে তিনি তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন। তা এর বাইরে আর কিছু জানেন না।
মৌসুমি ত্রিপুরার দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খাগড়াছড়ি সদর থানার উপ-পরিদর্শক মো. সালেহ বলেন, মামলা দায়ের পর থেকে সুভায়ন খীসাকে খুঁজতে বাসা ও অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইট ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়ে গত ১৬ আগস্ট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানাতে আবেদন নিয়ে যান প্রধান শিক্ষক মৌসুমি ত্রিপুরা। আবেদনটি সুভায়ন খীসার কাছে নিলে দেখতে অস্বীকৃতি জানান। অফিসের কাজ শেষে কেন তার সাথে এমন আচরণ করেছেন জানতে চাইলে মৌসুমি ত্রিপুরার ওপর চড়াও হয়ে সুভায়ন খীসা মারধর করেন। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান অফিসে থাকা লোকজন। হাসপাতালে সাাংবাদিকদের কাছে মৌসুমি ত্রিপুরা অভিযুক্ত সুভায়ন খীসাকে স্বামী দাবি করলেও মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোন মন্তব্য করেননি মৌসুমি ত্রিপুরা।
এদিকে, ঘটনার দিন নিজ কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের কাছে মৌসুমি ত্রিপুরা গায়ে হাত দেয়ায় তাকে সরাতে ধাক্কা দেয়ার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুভায়ন খীসা।