ছেলেকে বিক্রি চেষ্টার ঘটনা সত্য, নেপথ্য অভাব অনটন ও মানসিক সমস্যা !

প্রকাশঃ ১৪ অগাস্ট, ২০২২ ০৪:১৩:০৬ | আপডেটঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৪৬:০১

সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোষ্ট ভাইরাল হলে আলোড়ন তৈরি হয় পাহাড়ি শহর খাগড়াছড়ি জুড়ে। ১২ হাজার টাকায় নিজের বছর বয়সী  সন্তানকে বিক্রি করার দর দেন এক গর্ভধারিণী। ঘটনাটি জানাজানি হলে এক ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে অচ্ছিন্ন রয়ে যায় মা-ছেলের সম্পর্ক। 

 

ঘটনা আসলে কি সত্য?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনরা আলোচনা, সমালোচনা শুরু করেন। ঘটনা আদৌ সত্য কি না? নিজের মা কেন সন্তানকে বিক্রি করবে সব। তবে সরেজমিন শুক্রবার খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের পাক্কুজ্যছড়ি গ্রামে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছেলে রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে মায়ের হাটে তুলে দর দেয়ার ঘটনাটি সত্য। অভাব অনটনের সংসারে ছেলেকে নিজে ঠিক মত খাওয়া, ভরণপোষণ দিতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় মা সোনালী চাকমা। মায়ের এমন সিদ্ধান্তে স্বজন স্থানীয়রা হতবাক। 

 

সোনালী চাকমার অস্বাভাবিক আচরণ

৪৭ বছরের সোনালী চাকমার স্বামী শতোর্ধ্ব। থাকেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের সংসারে তিন ছেলে। বড় দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা এবং মেঝো ছেলে খাগড়াছড়ি সদরে দিনমজুরের কাজ করে। ছোট ছেলে রামকৃষ্ণ চাকমাকে নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় গোয়াল ঘরের পাশে থাকেন সোনালী চাকমা। বাবা, মা ভাইয়ের বাড়ির পাশাপাশি হলেও অভাব অনটনের নির্মমতায় স্বজনের খোঁজ নেয়াকে যেন ছিন্ন করেছে। দিন মজুরি করে যা আয় করেন তা নিয়ে নিজেদের সংসার চালাতে টানাপোড়নে বোন ভাগিনার কথা ভাবা যেন অসম্ভব করেছে নিয়তি। অভাব অনটনের সংসারে সোনালী চাকমার যেখানে ছেলের মুখে দুই মুঠো খাবার তুলে দেয়া দুষ্কর সেখানে নিচের মৃগী সহ অন্যান্য রোগের ঔষধ কিনে খাওয়া তো অসম্ভব। দীর্ঘ দিন ঔষধ খেতে না পেরে মানসিক চাপে পড়ে ছেলেকে গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি সদরের বাজারে নিয়ে বিক্রির দর দেন , কথা গুলো বলে চোখ মুছলেন মা সোনালী। ছেলেকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলেও অভাব অনটন গুছতে ছেলেকে বিক্রির চেষ্টা অকপটে স্বীকার করে নিলেন। 

 

সোনালী চাকমার ভাই ভারতব চাকমা জানান, দিদি (সোনালী চাকমা) মানসিক ভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। মৃগী রোগী। মৃগের ভাব উঠলে এলোমেলো কথা কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি বাজার থেকে এক চেয়ারম্যান ফোন করে ছেলেকে (রাম কৃষ্ণ চাকমাকে) বিক্রি চেষ্টার কথা বলার পর বাবা গিয়ে দিদি ভাগিনাকে গিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন। অভাবের কারণে বোনের চিকিৎসা করাতে পারেন না বলেও আক্ষেপ করেন। 

 

বিক্রি চেষ্টার ঘটনা জানাজানি হয় কি করে!

বৃহস্পতিবার সকালে বাবা কালা চাকমাকে খাগড়াছড়ি বাজারে আসার কথা বলে ছেলে রামকৃষ্ণকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় সোনালী চাকমা। বাজারে এসে সবজি বিক্রি করতে আসা কয়েকজন মহিলাকে ছেলে বিক্রির প্রস্তাব দেন। তারা একজনকে বলার পর ছেলেকে কিনতে হাজার টাকা প্রস্তাব দেন। কিন্তু সোনালী চাকমা ১২ হাজার টাকার কমে  বিক্রি করবে না, নিয়ে দর কষাকষির এক পর্যায়ে জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমা বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে তাঁর হস্তক্ষেপে মা ছেলেকে উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়। 

 

মা-ছেলের পাশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা

ভাইবোন ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ানম্যান সুজন চাকমা বলেন, ব্যক্তিগত ভাবে পরিবারটির পাশে দাড়াঁনোর পাশাপাশি রামকৃষ্ণ চাকমাকে শিশু সদনে থাকার ব্যবস্থার করার চেষ্টার আশ্বাস দেন। 

 

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা বলেন, পরিবারটির জন্য মাসের খাদ্য শস্য নগদ কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। ছাড়া সদর ইউএনও-কে বলে একটি সরকারি ঘর ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। 

 

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের জানান, মৃগী রোগীদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে সময়ে চিকিৎসা নিয়ে তা অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়। জেলা সদর হাসপাতালে ভালো চিকিৎসক বিনামূল্যে চিকিৎসা হয়। পরিবার যদি চায় স্বাস্থ্য বিভাগ সহযোগিতা দিবে