প্রকাশঃ ৩১ মার্চ, ২০২২ ০২:৩১:০৪
| আপডেটঃ ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:০০:২৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বারুণী স্নানোৎসবকে ঘিরে দুই বাংলার মিলন মেলা হয়েছে খাগড়াছড়ির রামগড়ে। বুধবার ভোর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নির্ধারণী ফেনী নদীর শুন্যরেখায় বসে মিলন মেলার আসর। রামগড়ের আনন্দপাড়া, মহামুনী এলাকায় ফেনী নদীতে নেমে পূণ্য স্নান করা হয়। নদীর পাড়ে দুইদেশের সীমারেখায় পুরোহিতরা বসেন পূর্ণার্থীদের তর্পণ পাঠ, পূজা-অর্চণা ও শুদ্ধিব্রত করাতে। দেশের সীমারেখা থেকে জলকেলীতে মেতে উঠেন অনেকে।
হিন্দু পুরোহিত রমেন্দ্র আচার্য বলেন, চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথি পবিত্র দিন। এ দিনে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে পূজা দিয়ে প্রয়াতদের আত্মার সদগতি কামনায় স্নান করা হয়। এ বিশ্বাস শত শত বছর ধরে চলে আসছে। দুই দেশের আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতজনদের মিলন মেলাও এ বারুণী স্নানোৎসব। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে পারাপার বন্ধ রয়েছে।
ফেনী নদীর আনন্দপাড়া ঘাটে কথা হয় চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাটের রিনু শীলের সাথে। নদীর পাড়ে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম বাজার ঘাটের দিকে। কথোপকথনের একপর্যায়ে বলেন, বাপের বাড়ি ঐপাড়ে(ভারতের ত্রিপুরা)। বাবা-মা বেঁচে নেই। ভাই বোনরা আসবে বলছে। তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। অন্যান্য বছর নদী পার হয়ে বাপ দাদার ভিটা দেখতে যেতে পারতাম, এখন পারছি না।
রিনু শীলের মতো আরও কয়েক শত স্বজন অপেক্ষা করে ছিলেন ঐপাড়ে সীমান্তে থাকা স্বজন-পরিজনদের একনজর দেখতে। নদীর শুন্যরেখায় ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর দেয়া অস্থায়ী সীমারেখায় ছিল নজরদারি। বিএসএফ, ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন টহলে। তারপরও সুযোগ পেলে শুন্যরেখায় গিয়ে স্বজনদের সাথে ভাব বিনিময় ও দেখা করেছেন অনেকে। রামগড়ের আনন্দ পাড়া থেকে মহামুনী পর্যন্ত দীর্ঘ ২ কিলোমিটার জুড়ে কেবল এ মিলন মেলার দৃশ্য চোখে পড়েছে সারাদিন।
শুন্যরেখা কথা হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাংবাদিক প্রসেনজিৎ বৈদ্যের সাথে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক দর্শণীয় স্থান ইউটিউবে দেখেন। বান্দরবান দেখার ইচ্ছা অনেক। সুযোগ পেলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসার আগ্রহও প্রকাশ করেন।
রামগড়ের সিনিয়র সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, বারুণী শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বারুণী স্নানে সম্প্রীতির মেলবন্ধন হতো ফেনী নদীতে। দেশ ভাগ ও স্বাধীনতার পরে সীমান্ত জটিলতায় রামগড় ও ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে পারাপার বন্ধ হলেও প্রতিবছর বারুণী স্নান ঘিরে দুই বাংলায় পারাপার হতো। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত এ উৎসব। যা উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসত অনেকে। তবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট ও পরে করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হয়। নদীর শুন্য রেখা পারাপার করতে না দিলেও এ বছর হয়েছে বারুণী স্নানোৎসব। আশা করি ভবিষ্যতে দুই দেশ আরও উদার হবে সম্প্রীতি বিনিময়ে।
রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. সামসুজ্জামান বলেন, বারুণী স্নানোৎসব ঘিরে দুই দেশের মিলন মেলা হয়েছে। নদীতে গোসল, পূজা সহ অন্যান্য ভাবাচার চলছে। দর্শণার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত আইন মেনে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।